দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে আবারও দাম বাড়ানোর হিড়িক চলছে। বিশ্ববাজারে মূল্য হ্রাস পেলেও দেশীয় বাজারে এর প্রভাব নেই বললেই চলে। এ অবস্থার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবে এ চক্র বাজারে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরেই বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অতীত সরকারেও তারা সক্রিয় ছিল, বর্তমান সরকারের সময়েও তারা তাদের রূপ পাল্টে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মার্চের আগ পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে নানা ছাড়-সুবিধা পাওয়ার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে তেলের সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে তারা। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—দাম বাড়ানো ও সরকারকে বিব্রত করা।
সবশেষে সরকার বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে। অথচ তথ্য বলছে, ওই সিন্ডিকেট এখন আরও ৭ টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা দাবি করছে, ডলারের দাম, ব্যাংক খাতের অস্থিরতা, ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে—২০২২ সালে যেখানে সয়াবিন তেল ছিল প্রতি টন ১৬৬৭ ডলার, সেটি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে এসে দাঁড়িয়েছে ১০৪০ ডলারে।
ক্যাব-এর কেন্দ্রীয় নেতা এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “দেশের বাজারে মাত্র ৪-৫টি কোম্পানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। এরা অতীতেও একই কৌশলে বাজারের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজও তারা সক্রিয় রয়েছে।”
গত বছরের নভেম্বর থেকেই বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। খোলা ও বোতলজাত তেলের দাম হঠাৎ বাড়তে থাকে। সরকার দুই দফায় শুল্ক কমালেও দাম স্থিতিশীল হয়নি। রমজান ও ঈদের সময় কিছুটা সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ শেষ হতেই আবারও দাম বাড়ানো হয়।
বর্তমানে সরকারি নির্ধারিত দামে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৬৯ ও বোতলজাত তেল ১৮৯ টাকা হলেও বাস্তবে তা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৮০ ও ১৯০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো লিটারে অন্তত ২০ টাকা বাড়াতে চেয়েছিল, যা সরকার মানেনি। ফলে নতুন করে আরেক দফা দাম বাড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা সরকারের সব নিয়ম মেনেই কাজ করছে। তবে ডলার ও ব্যাংক খাতে অস্থিরতা আমদানিতে প্রভাব ফেলছে। তাদের দাবি, শুল্কছাড় শেষ হওয়ায় কর-ভ্যাটসহ সব ব্যয় বাড়ছে। সেই হিসেবে তেলের দাম আরও বাড়ানো যৌক্তিক।