জাতিসংঘের স্থায়ী আদিবাসী বিষয়ক ফোরামের (UNPFII) ২৪তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমার বক্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেখানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান—যা দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও চট্টগ্রামের ঐক্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
২১ এপ্রিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে সন্তু লারমার নাতনি অগাস্টিনা চাকমা বলেন,
“পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।”
তিনি আরও দাবি করেন,
“সেটলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য এলাকার বাইরে সম্মানজনকভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।”
এই বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অংশবিশেষকে কার্যত বাঙালিশূন্য করে আলাদা জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেখছেন বিশ্লেষকরা। এতে দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার আশঙ্কা উস্কে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অগাস্টিনা চাকমা আরও অভিযোগ করেন যে,
“২০২৪ সালে ১২টি জুম্ম নারী ও মেয়েদের যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার রেকর্ড রয়েছে, কিন্তু আইনি বিচারে দুর্বলতা রয়েছে। এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অভিযোগ জাতিসংঘের মঞ্চে তুলে ধরার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক ধরনের স্বায়ত্তশাসিত বা স্বাধীন অঞ্চলে রূপান্তরের লক্ষ্যই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অধিবেশনে অগাস্টিনার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস-এর সদস্য চঞ্চনা চাকমা ও মনোজিত চাকমা এবং কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ও পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও সভায় অংশ নেন।
স্থায়ীভাবে কানাডা প্রবাসী অগাস্টিনা চাকমা বলেন,
“সিএইচটি আদিবাসী নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের এই ফোরামকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ নিতে হবে।”
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না আসলেও, রাজনৈতিক ও জাতীয় পর্যায়ে এ বক্তব্যকে দেশের ভেতরে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচারণা’র অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘের এই অধিবেশন চলবে ২ মে পর্যন্ত।